জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন বলেন, ইনশাল্লাহ ক্ষমতায় আসার পর এই এলাকাকে আরো উন্নত করার দিকে আমরা অগ্রসর হবো, এখানে আদমজ জুট মিল ছিল কিন্তু সেটাকে বন্ধ করার পর আদম জিপি সেট করা হয়েছে। এভাবেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এই এলাকাকে যতটা সম্ভব উন্নয়তের দিকে নিয়ে যাব। ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার থাকাকালীন সময় এখানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি হয়েছে। সিটি কপোরেশনের এলাকায় সিদ্ধিরগঞ্জে দশটি ওয়ার্ড ছিল, এই দশটি ওয়ার্ডের অধিকাংশ কাউন্সিলর ছিল গডফাদারের লোক। তারা নিজেরাও সন্ত্রাসী ও লুটেরা। এই সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নাই যা তারা করেনা। বিএনপি যে ইপিজেড উপহার দিয়েছিল, সেখানের ভরপুর ব্যবসা বাণিজ্য দখল করে তারা ত্রাশ সৃষ্টি করেছে।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী এলাকায় এম ডব্লিউ স্কুল এন্ড কলেজের প্রাঙ্গনে মাদক-চাদাবাজী-সন্ত্রাস রোধে জনসমাবেশ করে জেলা বিএনপি। এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য একথা বলেন গিয়াসউদ্দিন। এসময় তিনি আরও বলেন, এই টাকা লুটপাট করে তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এক সন্ত্রাস বাহিনী গঠন করেছিল। একইভাবে আন্দোলনের সময় বিএনপি এবং অন্যান্য নেতাকর্মীদের ওপর তারা এই অস্ত্র দিয়েই হামলা করেছে। হামলা এবং অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমাদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছে। তাদের কারণে এই এলাকার মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি। আজ যখন ছাত্র জনতার আন্দোলন বিজয় হয়েছে তখন এ এলাকার মানুষ আনন্দিত। এই সভায় আপনারা যেভাবে আনন্দ উল্লাস করে, ব্যান্ড পার্টি নিয়ে এসেছেন আমি আগে এটা কখনো দেখিনি। আপনাদের এই উল্লাস দেখলে বোঝা যায় যে সন্ত্রাসীদের পতনের পর জনসাধারণের মধ্যে নতুন চেতনার সৃষ্টি হয়েছে। আর যখন আমরা আনন্দ করছি তখন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেছে, সমাজের দেখানোর মতা মুখ তাদের নেই। তবে পালালে হবে না যে অপরাধ তারা করেছে, তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। ইপিজেডর মিল মালিকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিগত ১৬ বছর তাদেরকে আপনারা বিভিন্ন ভয়-ভীতির কারণে অনেক কিছু মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এখন যদি ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে তাদেরকে আরো অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা করে তোলেন বা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেন তাহলে এর দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। আমাদের দলের লোক হোক বা অন্য কেউ, ইপিজেডে যদি বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে বা কোন মিল মালিক কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে আমাদের জানাবেন তার বিচারের ব্যবস্থা আমরা করব। আপনার নির্বিঘ্নে ব্যবসা করবেন এটা আমরা চাই তবে কোন সন্ত্রাসীদের সাহায্য করলে আমরা ব্যথা পাব। আমরা যদি ব্যথা পাই তাহলে সেটার কি জ্বালা কি হতে পারে এটাও আপনারা জানেন। সাবেক এই এমপি আরও বলেন, ওরা এমনই ব্যবস্থা করেছিল যে স্কুলে আমি অধ্যায়ন করেছি, সে এম-ডাবলু স্কুলের থেকেই কিছু বিচার আসতো, যে কিছু প্রধান শিক্ষক এই স্কুল থেকে অনেক টাকা লুটপাট করেছে। আবার সেই শিক্ষকদের এই স্কুলে আনার জন্য অনেকে কন্টাক্ট নিয়ে কাজ করতো। জেলা প্রশাসনের কাছে আহবান করছি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তদন্ত করে এই দুর্নীতিবাজদের বের করতে হবে এবং শাস্তি মূলক ব্যবস্থা করতে হবে। যে অর্থ তারা লুটপাট করেছে সেই অর্থ প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দিতে হবে। বিভিন্ন স্কুল কলেজে দেখা যায় বহিরাগত কিছু লোক এসে স্কুল প্রাঙ্গণের মধ্যে নিজের বক্তব্য দেয়। বহিরাগত কেউকে স্কুলের মধ্যে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন ধ্বংসের মুখে চলে গিয়েছিল আমরা এগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে চাই। বই পরিবর্তন করে সিলেবাস পরিবর্তন করে সরকার শিক্ষার্থীদের ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। অন্তবর্তী কালীন সরকারকে আমরা সাহায্য করতে চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করতে চাই। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে উপযুক্ত হতে পারে। যারা পালিয়ে গেছে তারা বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করছে কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এই সরকারকে ব্যর্থ সরকারের প্রমাণ করা যায়। আমরা এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দিতে চাইনা। তারা দেশের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, বিচার ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করেছে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, প্রশাসনকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে এক কথায় তারা দেশকে যে ধ্বংসের যে মাত্রায় নিয়ে গেছে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে অনেক পরিশ্রম করতে হবে আমাদের। তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাই। আমাদের সজাগ থাকতে হবে কেউ যেটা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে না পারে, যাদের অফুরন্ত টাকা আছে সেগুলো দিয়ে যেটা আমাদের কেউ কে চিনতে না পারে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু কিছু লোক আমার কাছে গোপনে আছে তারা বলে আওয়ামী লীগের সবাই তো খারাপ না। আমার প্রশ্ন যদি তারা ভালো হয় তাহলে বিগত ১৬ বছর যখন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের উপর অত্যাচার চালিয়েছে তখন তারা চুপ ছিল কেন। অনেকেই বলবেন যে দলের থেকে বহিষ্কার হওয়ার ভয়ে চুপ ছিলেন। আজ তো আপনাদের সেই ভয় নেই, আজ আপনাদের উচিত সেই সত্য কথা বলে প্রতিবাদ করে তাদেরকে বহিষ্কার করা। যদি সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার করে আপনারা ভালো মানুষের নতুন ভাবে আওয়ামী লীগ করতে চান তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তা না হয়ে গডফাদার অফিস হাসিনাকে নিয়ে আপনারা আবার রাজনীতি করবেন চিন্তা করছেন তাহলে ওই চিন্তা ছেড়ে দেন। এগুলো হচ্ছে স্বপ্নের ধুলোবালি। যারা চলে গেছে তারা এমনি যায়নি এদেশের জনগণ যখন ক্ষেপে গিয়েছে সেটাকে ভয় পেয়ে তারা পালিয়ে গেছে। আমরা আপনাদের বিতাড়িত করিনি আপনারা নিজেরাই পালিয়ে গেছেন। অনেকেই জোহা পরিবারের চামচামি করে রাজনীতি করেছেন, আপনারা কি আদৌ স্বপ্ন দেখছেন যে সেই পরিবারকে নিয়ে আবারো রাজনীতি আসবে, কখনেই না। এই পরিবারের দুইটা সন্তান ছিল আজমিরী এবং অয়ন ওসমান। তারা কিন্তু কোন দলে নাম লেখায় নি। তাদের রাখা হয়েছিল সন্ত্রাসী এবং অর্থলোট পাটের জন্য। এই সন্তানদেরতো রাজনীতিতে বীজই বপন করেননি, তাহলে আগামীতে কে আসবে রাজনীতিতে। আজ আমার আফসোস হচ্ছে, নিজে কিভাবে নিজেদের সন্তানকে ধ্বংস করে দিলেন। রাজনীতিতে আসার আগেই শেষ। বিকেএমইএ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের আহ্বান যে ব্যবসায় সংগঠন করেছিল, সেই সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাই এদের সাহায্য করেছে। ওসমান পরিবারের সাথে সমস্ত মিটিং মিছিলে ছিল। আজ তারা ভিন্ন বেসে সমাজে আসতে চায় এতটা সহজ নয়। অনেকদিন খেলাধুলা করেছেন কিন্তু এখন বিপ্লব হয়েছে, এখন খেলাধুলা করতে এসে লাফ দিলে কারো দরকার হবে না আপনার হাড়গোড় ভেঙ্গে যাবে। এখানে যে বিকেএমইএ সংগঠন আছে, সেখানে সভাপতি পালিয়ে গেছে। কিন্তু শহর সভাপতির এখন ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালন করছে। এই হাতেম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রধান দোসর। তার বক্তব্য বিবৃতির সব আছে। তাকে দেখে এখন আপনারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যবসা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছেন মনে রাখবেন, মনে রাখবেন বিএনপির সবাইকে একসাথে করে ফেললেও গিয়াস উদ্দিনের মাথা গিলতে পারবেন না। আপনাদের ছাড় দেওয়া হবে না অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে যারা ভালো নিরীহ তাদের ধারায় কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি থাকে বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে, অন্তবর্তী কালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে। একটা ব্যবসা বিএনপি নেতার নামে দিয়ে তার সন্তানের নামে হাজারটা ব্যবসা করায়। কেউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমার আহ্বান থাকবে এই সমস্ত দালালদের বিতাড়িত করে আপনারা নতুন কমিটি গঠন করেন।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © দৈনিক স্বাধীন বাংলাদেশ