নারায়ণগঞ্জে আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে বন্দরের রফিক রাজাকারের কথা। যার ছেলে বন্দর মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ। রাজাকারের সন্তান হয়েও মাকসুদ মানুষের জনপ্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন। এ লজ্জা রাখে কোথায় বন্দরবাসী। এখন আবার বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান হবার জন্য স্বপ্ন দেখছেন তিনি। সচেতন মহলের অভিযোগ, বন্দরে কি ভালো মানুষের অভাব পড়ে গেছে যে রাজাকারের সন্তানকে আবারো চেয়ারম্যান বানাতে চাচ্ছে। রাজাকারের সন্তান হয়ে মাকসুদ আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। এতো টাকা আসলো কোথা থেকে? মাকসৃদ চেয়ারম্যানের বিভিন্ন কর্মকান্ড ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান। গত শনিবার (৩০ মার্চ) ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে তিনি মাকসুদ চেয়ানম্যানের বিভিন্ন কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
এ ব্যাপারে বন্দরবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজাকার রফিকের সন্তান মাকসুদের ছেলে শুভ’র অত্যাচারের মুছাপুরের মানুষ অতিষ্ট। পিতা মাকসুদের দাপটে তার সন্তান শুভ আজ বেপরোয়া। এই রফিক রাজাকারের মেয়ের জামাই অর্থাৎ আলোচিত রাজাকার সন্তান মাকসুদের বোন জামাই হলো সিদ্ধিরগঞ্জের মরহুম বিএনপি নেতা হুমায়ূন কবীর। যিনি নাসিক ৭নং ওয়ার্ড কদমতলী গ্যাস লাইন এলাকার বাসিন্দা। মরহুম হুমায়ূন কবীরের দুই ছেলে হলো গিরিংঙ্গিবাজ মুন্না ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ডজনখানী মামলার আসামী,র্যাবের হাতে বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেফতার সজু। অভিযোগ রয়েছে, রাজাকারের সন্তান হয়ে মাকসুদ যেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমনি রাজাকারের নাতি হয়ে শুভ, মুন্না ও সজু নিজেদেরকে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তারা যেকোন অপরাধ করতে দ্বিধা করছে না। রাজাকার রফিক যেভাবে ৭১ সালে পাকিস্তানীদের শান্তি কমিটির নেতা হয়ে বাঙ্গালীদের অত্যাচার করেছেন, ঠিক একই কায়দায় বর্তমানে তার ছেলে ও নাতিরা মানুষকে অত্যাচার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গড়ে তুলেছেন টর্চার সেল। যেখানে মানুষকে তুলে নিয়ে মারধর করে থাকে। পুলিশ গত বছর মাকসুদের ছেলে শুভ’র টর্চার সেলের সন্ধান লাভ করেছেন। যা বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলাও হয়েছে শুভ’র বিরুদ্ধে। অপনদিকে সিদ্ধিরগঞ্জে অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আলোচনার তুঙ্গে রাজাকারের নাতি সজু। যার বিরুদ্ধে রয়েছে কিশোরগ্যাং এর তকমা। যার বিরুদ্ধে ডজনখানী মামলা রয়েছে। রয়েছে মাদক ও অস্ত্রের মতো মামলা। তারও রয়েছে টর্চার সেল। যেখানে মানুষকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তার নির্যাতন থেকে আপন চাচা সুজনও বাদ যায়নি। গত কয়েকদিন আগে সজু তার চাচা সুজনকে মালমন্দ করতে গিয়ে এমপি শামীম ওসমানকেও গালমন্ধ করার ফোন বেকর্ড ভাইরাল হয়। যা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রেসক্লাবের ফেসবুক পেজে সংরক্ষিদ রয়েছে। তার বড় ভাই মুন্নার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। নিজের রাজাকারের নাতি হয়েও এলাকার মোড়ল সাজতে চাইছে সে। সাজতে চাইছে আ.লীগের নেতা। ৭নং ওয়ার্ডের কয়েকজন ত্যাগী আ.লীগ নেতা ক্ষোভের সাথে জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জে কি আ.লীগের কর্মী কমে গেছে যে দুর্ধর্ষ রাজাকার রফিকের নাতিদের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগকে চলতে হবে। মুন্না ইতিমধ্যে মসজিদ কমিটির সভাপতি বনে গেছে। বনে গেছে সমাজের নেতা। অথচ তাদের পরিচয় হলো তারা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। তারা দেশের শত্রু। জাতির শত্রু। রাজাকারের বংশধর। তাদেরকে আগে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে এলাকাবাসী ক্ষোভের সাথে জানায়। যেই কথাটি গত শনিবার (৩০ মার্চ) ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে বন্দর উপজেলার জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নেতৃবৃন্দের সাথে উন্নয়নমুলক মতবিনিময় সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা একেএম সেলিম ওসমান বন্দরের কুখ্যাত রাজাকারপুত্র মুন্না ও সন্ত্রাসী সজুর মামা মাকসুদ কে নিয়ে করেছেন। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে মাইকে বলেছেন, ‘মাকসুদ সাহেব আমি এতগুলো মানুষের সামনে আবার আপনাকে আমি বললাম আল্লাহর কাছে মাপ চান। এবং আপনার দায়িত্বে আপনি ফিরে আসেন। আমি আপনাকে কিছু বলব না। মনে রাখবেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা। সংসদ সদস্য আরো বলেন, একটা ইউনিয়নে আমি চেয়ারম্যান খোঁজা শুরু করে দিছি। এখন দুইজন আমার অমতে নির্বাচন করার চিন্তা ভাবনা করছে। একজন তো রাজাকারের সন্তান। আমি বলি না ওনিই প্রমান করে দিয়েছেন সে রাজাকারের সন্তান। মানুষের জন্য কাজ কর আগের পাপ ভুলে যাও। পাপে বাপেরেও ছাড়ে না।’ যদি ভালই ভালোই কথা শুনবেন তো শুনবেন না হলে মুগুর কিভাবে বানাতে হয় এটা আমি জানি। আপনি আগামীকাল থেকে উইথড্র করেন। আপনার এত টাকা কোথা থেকে হল মাকসুদ সাহেব। আপনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা দেওয়া শুরু করেছেন। আমার কাছে হিসাব আছে প্রায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি টাকা খরচ করেছেন। ওইদিন নাইরে নাতি খাবলাইয়া খাবলাইয়া খাবি। আপনি ভুলে যাবেন না বাংলার মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। যদি আপনি আপনার রাজাকার পরিচয়টা দেন। আমি আপনাকে নিষেধ করলাম আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমার মৃত্যু হলেও আপনাকে ছাড়বে না। আপনি কেন অনুমতি নিলেন না কেন আলোচনা করলেন না। আপনি উপজেলা চেয়ারম্যান হবেন। ওইদিন ভুলে যান। সেলিম ওসমান বলেন, আমি বলে দিলাম মাকসুদ চেয়ারম্যানকে মুছাপুরে একটা জনসভা দেন আমি আসবো আমি এইটুকু বলতে চাই আমি যদি বলি মাকসুদের বউ ও মাকসুদকে ভোট দিবে না। মাকসুদ আপনার ব্যাপারে আমি জানতাম না পরে জানতে পারলাম আপনি রাজাকারের পুত্র। সেই রাজাকারের সন্তান হয়ে কি ভাবে আমার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ছবি ব্যানার ফেস্টুনে ব্যাবহার করেন। অনুরোধ করবো মাকসুদ তুমি ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসো। স্থানীয় আ.লীগ নেতারা বলেন, আজ রাজাকারের সন্তান সিদ্ধিরগঞ্জের মুন্না ও সজুর মামা মাকসুদের কর্মকান্ডে চটেছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা এমপি সেলিম ওসমান। তাইতো তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছেন, মাকসুদ চেয়ারম্যান রাজাকারের সন্তান হয়ে কি ভাবে আমার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ছবি ব্যানার ফেস্টুনে ব্যাবহার করেন। অর্থাৎ রাজাকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারাই আগে প্রতিবাদ করবে। আজ মুক্তিযোদ্ধা এমপি সেলিম ওসমান প্রতিবাদ করেছেন। এবার জনগনকেও প্রতিবাদ করতে হবে। রাজাকারের বংশধরদের, রাজাকারের নাতিদের সমাজ থেকে বয়কট করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুসহ ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের আত্না শান্তি পাবে বলে নারায়ণগঞ্জে সচেতন মহল মনে করেন।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © দৈনিক স্বাধীন বাংলাদেশ