1. admin@dailyswadhinbangladesh.com : admin :
  2. n.ganj.jasim@gmail.com : স্বাধীন বাংলাদেশ রিপোর্ট : স্বাধীন বাংলাদেশ রিপোর্ট
  3. reduanulhoque11@gmail.com : reduanulhoque :
  4. sohag42000@gmail.com : sohag42000 :
সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
তৈমূর থেকে মীরজাফর : দিপু ভূইয়া ডিএমপি কমিশনারকে অবসর দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি….. আ. লীগ বলছে, পরোয়া করি না; বিএনপি বলছে, ইতিবাচক দূতাবাসের মুখপাত্র ……….. কতজন ভিসানীতির শিকার, প্রকাশ করবে না যুক্তরাষ্ট্র বড় হারে এশিয়ান গেমস শুরু বাংলাদেশ হকি দলের জনগণের মতামতের উপর ভিত্তি করেই গণতন্ত্রের পথরেখা নির্ধারিত হবে : ওবায়দুল কাদের সোনারগাঁয়ে অণ্ডকোষে আঘাত করে স্বামী হত্যার অভিযাগে ২য় স্ত্রী কারাগারে না.গঞ্জে ১ দিনে প্রায় অর্ধশত ডেঙ্গু আক্রান্ত, শতাধিক হাসপাতালে ভর্তি ‘সকলের সাথে সমান আচরণ করুন’ ….. প্রশাসনের উদ্দেশ্যে সাখাওয়াত না.গঞ্জে ইঞ্জিন মিস্ত্রির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার, বন্ধু আটক

ইটভাটায় পুড়ছে শিশুর ভবিষ্যৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩

ইটভাটাগুলোতে থরে থরে সাজানো কাঁচা ইট। রোদে শুকানোর পর এগুলো উঠছে চুল্লিতে। আগুনের তাপে পুড়ছে ইট। সেই সঙ্গে পুড়ছে যেন শিশুর স্বপ্নও। এসব ইটভাটায় অনেক শিশুরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। পরিবারের আর্থিক সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নানা কাজ করিয়ে নিচ্ছেন ইটভাটার মালিকরা। এমনই চিত্র দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলির ইউনিয়নের ইটভাটাগুলোতে। এই ইটভাটায় অধিকাংশ সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার শ্রমিকরা কাজ করছে। শিশুশ্রম আইনকে তোয়াক্কা না করে শিশুদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন ভাটার মালিকরা। ভাটার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মজুরি বৈষম্যেরও শিকার হচ্ছে এ শিশুরা। সেই সাথে শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য নেই কোন স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, করতে হচ্ছে ঝোপড়ি দিয়ে গড়ে উঠা টয়লেট। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

ভাটাশ্রমিকের সঙ্গে শিশুরাও কাজ করছে। ওদের বয়স ৭ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।এ সময় কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব শিশুর কেউ কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ছে। আবার কেউ কেউ এখন আর বিদ্যালয়ে যায় না।কেউ বা কখনো বিদ্যালয়ের মুখই দেখেনি । কেউ নিজে থেকেই, আবার কেউ মা-বাবার সঙ্গে ইটভাটার কাজে এসেছে। কাঁচা ইট রোদে শুকানো, ইট তৈরি, ট্রলিতে করে এবং মাথায় করে ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো, মাটি বহন করাসহ সব কাজেই নিয়োজিত এসব শিশু।তাছাড়া অনেকে চুল্লিতে কয়লা বা কাঠ দেওয়ার কাজও করছে যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

তারা আরো জানায়, হাজার ইটে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।যেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিকরা একদিনে ১ হাজার ইট বহন করে সেখানে এই সব শিশুরা কেউ দুই দিন বা কেউ চারদিনে হাজার ইট টানে।তাতে তারা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে পায় আর সেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৪৫০-৫৫০ টাকা ।মজুরি সাশ্রয় করতে আইন অমান্য করে এভাবে শিশুদের কাজে লাগাচ্ছেন ভাটার মালিকরা।

সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলি ইউনিয়নের বক্তাবলি ঘাট সংলগ্ন মেসার্স নবীন ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং(এন বি এম ব্রিকস ফিল্ড) খন্দকার সাহেবের ইট খোলা নামে পরিচিত সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটা শ্রমিকের সঙ্গে স্কুলপড়ুয়া ২৫-৩০ জন শিশু ভাটাটিতে কাজ করছে। ওদের বয়স ৭ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। কয়লার পরিবর্তে সংরক্ষিত বনের কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। ফসলি জমি গভীরভাবে খনন করে সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। মাটি ব্যবহার করা হলেও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নীরব বলে জানায় স্থানীয়রা। নির্বিচারে ফসলি জমি কাটার ফলে পরিবেশ ভারসাম্যও হারাচ্ছে।

১১ বছরের এক শিশুকে মাথায় ইট টানতে দেখা যায়।তার নাম জানা যায় ইয়াছিন।লেখাপড়া ফেলে মা-বাবার সঙ্গে সে এ ভাটায় কাজ করতে এসেছে ইয়াছিন। এখানে সে কাঁচা ইট তৈরি এবং মাথায় করে চুল্লিতে ইট আনার কাজ করে। ইয়াছিনের মা আরো বলেন, ছয়-সাত মাস ভাটায় কাজ করে আবার গ্রামে সিলেট ফিরে যাবে ওরা। রুটি রুজির জন্য ছেলের পড়ালেখার ক্ষতি হলেও কিছুই করার নেই।

সিলেটের রুবেল কখনো স্কুলেই যায়নি গরীব ঘরে জন্মগ্রহণ করায়।জন্মের পর থেকেই মা,বাবা ও ভাইদের ইটভাটায় কাজ করতে দেখেছে।তাদের সাথে থাকতে থাকতে ৮ বছর বয়স থেকে নিজেও ইট ভাটার শ্রমিক হয়ে উঠে।পড়ালেখা করার স্বপ্ন থাকলেও তা স্বপ্নই রয়ে গেছে।অভাবের তাড়ায় বছরের ছয় মাস সর্দারের সাথে দাদনে ইট ভাটায় কাজ করছে।এখন রুবেলের বয়স ১২ বছর।এনিয়ে রুবেল জানায়,আমি, আমার মা ও আরো দুই ভাই পাবেল(১৫) ও রোমান(২০) কাজ করে এখানে।

আরো একজন ছোট ভাই আছে রুবেল ৭ বছরের।ছোট ভাইকে কি বিদ্যালয়ে পড়াবে কিনা জানতে চাইলে সে বলে হয়তো আর কয়েকদিন পর ও কাজ করবে আমাদের মত।পাশে থাকা ইটভাটার আরেক শ্রমিক বলে উঠেন, আমাদের মত গরীবের সন্তানদের কি আর স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন আছে।

সিলেট থেকে আসা কাউছার ও রবিউল দুই ভাই।কাউছারের বয়স ৭ আর রবিউলের ১২ বছর। দুই ভাই মা বাবার সাথে ইট ভাটায় কাজ করছে।তারাও কখনো বিদ্যালয়ে যায়নি। সখিনা বয়স ১১ ও তার ভাই ইসলাম বয়স ৭ বছর তারাও বাবা মায়ের সাথে ইট ভাটায় কাজ করছে।সখিনা মাদ্রাসায় অল্প পড়ালেখা করলেও তার ভাই এখনো পর্যন্ত বিদ্যালয়ের মুখ দেখেনি ৮ মাস ধরে কাজ করছে ইসলাম বাবা মায়ের সাথে।

এই রকম রুবেল(১২), পাবেল(১৫), কাউছার(৭), রবিউল(১২), সখিনা(১১), ইসলাম(৭), ইয়াছিন(১১), ঝুমা(১৪) , ফরহাদ(১২) এর মত ২৫-৩০ জন শিশু কাজ করছে এই ইটভাটায়। শুধ এই ইটভাটায় না বক্তাবলির আরো অন্যান্য ইটভাটা গুলোতে দেখা যাচ্ছে এই একইচিত্র।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর শিশু শ্রম আইনকে তোক্কা না করেই শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কেন কাজ করানো হচ্ছে এ ব্যাপারে কথা হয় এনবিএম ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী আবুল এর সঙ্গে। তিনি শিশু শ্রমের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,এখানে কোন শিশুদের কাজ করানো হচ্ছে না।আমরা তো তাদের দাদনই দেই নাই।হয়তো মা বাবা কাজ করে তাদের সাথে খুশির বিষয়ে কাজ করছে।

আমরা তো সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসলাম এবং শিশু শ্রমিকরাও নিজেরাও বলছে তারা দাদনে কাজ করছে এবং তাদের পারিশ্রমিকও দেওয়া হচ্ছে তাহলে আপনে মিথ্যা বলছেন কেন? এপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,হ্যাঁ। তাদের মা বাবার টাকার সাথে তাদের টাকা দেয় সর্দাররা।

ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ থাকা স্বত্ত্বেও বক্তাবলি সহ জেলার প্রতিটি ইট ভাটায় শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কিন্তু আপনাদের দপ্তরের ভূমিকা নিরব থাকার কারন কি জানতে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিচালক এস এম এনামুল হক এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ কোন কাজেই শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করা নিষেধ । ঝুঁকিপূর্ণ কেন সব কাজেই শিশু শ্রমিকই নিয়োগ নিষিদ্ধ। তবে আমাদের শ্রম আইন অনুযায়ী এই দায়িত্ব কলকারখানা অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে।উনাদের সাথে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বললে ভালো হবে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ মহাপরিদর্শক ডা.রাজীব চন্দ্র দাস বলেন ,আমরা পরিদর্শনে ইটভাটা গুলোতে যাই তখন যদি কোন শিশু শ্রমিকদের কাজ করতে দেখি তখন সেই ইটভাটাগুলোকে নোটিশ দিয়ে আসি।আমরা সাধারণ যখন যাই তখন তারা আমাদের যাবার খবর পেয়ে সাবধান হয়ে যায়। যেহেতু শিশু শ্রমিকদের কাজ করা নিষেধ এবং আপনেরা গিয়ে দেখেন আমরা আমাদের ইন্সপেক্টর পাঠাবো পরিদর্শনে তারপরও তাদের নোটিশ দিয়ে এর ব্যবস্থা নিবো।

এদিকে জেলার অধিকাংশ ইটভাটাগুলোতে কোন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বালাই নেই। না আছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, না আছে আর্সেনিক মুক্ত পানির ব্যবস্থা। তাছাড়া একই সাথে পরিবেশের ক্ষতি করে এই ইটভাটাগুলো চালানো হচ্ছে।এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কেন কোন কঠোর ভূমিকা পালন করছে না?এবিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মুঠোফোন নাম্বারটি (০১৭১২০১৬৮**)বন্ধ পাওয়া যায়।

দেশের শিশুশ্রম আইন অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না শিশুদের। তবে নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলির ইটভাটাগুলোয় সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে চলছে শিশুশ্রম। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের ভূমিকা কেন নিরব জানতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃমঞ্জুরুল হাফিজের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,সরাসরি এসে কথা বলুন। বলে কল কেটে দেন।পরদিন উনার সাথে দেখা করতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাবার পর রাষ্ট্রীয় কাজে ডিসির ব্যস্ত থাকায় তার দেখা করা সম্ভব না হওয়ায় মুঠোফোনে পুনরায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে শিশু শ্রমিকদের দিয়ে ইটভাটায় কাজ করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে শিশুরা শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে শিশুদের ত্বক ও নখ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা, অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

Facebook Comments Box
এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© স্বত্ব সংরক্ষিত © দৈনিক স্বাধীন বাংলাদেশ

প্রযুক্তি সহায়তায় Shakil IT Park